রমাদানুল মুবারক, পরিকল্পনা ও কিছু কথাঃ ৩য় পর্ব | তালহা যুবায়ের



বিষয়ঃ রমাদানুল মুবারক, পরিকল্পনা ও কিছু কথা লেখকঃ তালহা যুবায়ের পর্বঃ ০৩

পারিবারিক প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও আমল
পরিবার যেহেতু সমাজের প্রধান প্রতিষ্ঠান, সেটা হোক শিক্ষা, প্রশান্তি কিংবা ইসলামী মুল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সেহেতু অন্যান্য সবসময়ের মতই রমজানেও পরিবারকে নিয়ে একটা বড় আনন্দময় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকা উচিত। বিশেষ করে ছোট ছোট নিস্পাপ সম্ভাবনাময় মুসলিম শিশু-কিশোরদের মন ও মানস গঠনের জন্য তা আরো জরুরী।
 রমজানের কিছুদিন আগে থেকেই আনন্দ ও ফজিলতপূর্ণ আলোচনায় পরিবারে রমজানকে স্বরণ করা ।
 উপরের তথা ব্যক্তিগত পর্বে বর্ণনা করা পরামর্শগুলো যেগুলো ভাই,বোন, স্ত্রী, সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য সেগুলোর ব্যাপারে সবার মধ্যে একটা আনন্দময় উৎসাহ তৈরি করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
 এসব ক্ষেত্রে সন্তান অথবা ভাই-বোনদের বয়সের সক্ষমতা অনুসারে বিভিন্ন ইবাদতের টার্গেট ঠিক করে দিয়ে প্রতিযোগিতার মত করে এবং ঈদের দিনে ওদের পছন্দের নানা পুরস্কার দেয়ার ঘোষনা দেয়া যেতে পারে এবং পরবর্তীতে আনন্দঘন পরিবেশে তার বাস্তবায়ন। যেমন তাহাজ্জুদ চ্যালেঞ্জ, সূরা মুখস্ত, বেসিক সূরা ও দোয়ার অর্থ মুখস্ত বা দোয়া মুখস্ত কিংবা বয়সানুসারে ছোট ছোট গল্পের ছলে সাহাবী, নবী রাসূলদের জীবনী থেকে শুরু করে ইসলামের প্রাথমিক বিষয় নিয়ে সুন্দর সাহিত্য পাঠ, ভিডিও দেখা সহ যার যার বাস্তবতা অনুসারে প্রতিযোগিতা বা টার্গেট ঠিক করে দেয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাদের সাথে বোঝাপড়া ও তাদের মানসবোঝা টা জরুরি, নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষ করে যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা এসব বিষয়কে ফ্রেন্ডলি ভাবে, গল্পচ্ছলে ও খেলাধূলারমত করে বুঝিয়ে এবং সহজভাবে নিতে হবে।
 একইভাবে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্করাও টার্গেট করে উপরে বর্নীতগুলো অথবা এর বাইরে যেকোন সাওয়াবের কাজ করার চেষ্টা করে ঈদ পরবর্তীতে সবাই মিলে নিজেরা নিজেদের ট্রিট দিয়ে আনন্দ করা যেতে পারে। যেমন হয়তো স্পেশাল রান্না কিংবা সবার জন্য ছোট ছোট গিফট অথবা একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। যা পরিবারের মধ্যে বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রশান্তি, সম্মান আর ভালোবাসাকে আল্লাহর ইচ্ছায় অন্য মাত্রায় উন্নিত করতে পারে।
 বাসায় অবসর সময়গুলো তে অথবা বাচ্চাদের অবসরে বেশি করে তেলাওয়াত, ইসলামি গান, আবৃত্তি, কার্টুন, মুভি ক্লিপ ছেড়ে রেখে বছরের অন্যসময়ে না পারা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করা যা পরিবারের সাংস্কৃতিক অভ্যাসকে নতুন মোড়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
 সুযোগ হলে বাচ্চাদের বা পরিবারকে নিয়ে একসাথে সাহরী ও ইফতার করার চেষ্টা করা এবং উভয় সময়ে রমাদানের মহত্ত ও করনিয় নিয়ে হালকা ও প্রশান্তিময় আলোচনার চেষ্টা করা।
 যাদের সুযোগ আছে পরিবারের সবাই মিলে একসাথে মসজিদে জামাতে যাওয়া এবং যাদের সুযোগ নেই তারা একসাথে বাসায় জামাত পড়া। নিজের অবর্তমানে বাচ্চা কিংবা ভাই-বোনদের জামাতে নামাজ পড়া ও পড়ানোর ব্যাপারে শিখানো ও উৎসাহ দেয়া।
 সুযোগ হলে দু/একবার বাচ্চাদের হাত দিয়ে ফিতরার টাকা দান করানো এবং ফিতরার ফজিলত সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা। সম্ভব না হলে অন্তত বিষয়টা সম্পর্কে শিশুসুলভভাবে বুঝিয়ে বলা। এক্ষেত্রে যাকাতের ব্যাপারটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
 সবশেষে একটা পবিত্র, সুন্দর ও আনন্দময় ঈদের প্রস্তুতি নিন। রমজানের শেষ দিক থেকেই ঈদের অসাধারণ সব গানগুলো বাসায় লাউড স্পিকারে ছেড়ে দিয়ে ঈদের আমেজ নিয়ে আসুন। মনে রাখবেন, পুঁজিবাদের মূল অস্ত্র কিন্তু এই চাকচিক্য ও বিনোদন। সুতরাং আমাদের উৎসবগুলোকেও অলংকারময় ও আনন্দপূর্ন করে তুলতে হবে। সাধ্যমত পরিবারের জন্য কেনাকাটা করুন এবং আমাদের চীরচারিত সংস্কৃতি অনুসারে ঈদের দিনে কিছু ভাই-বোনদের বাসায় দাওয়াত করুন। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন ঈদের দিনটিতে ছুটি নেয়ার চেষ্টা করুন। সবাই মিলে একসাথে ঈদের নামাজ পড়ুন এবং মুসলিম ভাইবোনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন। তা হতে পারে পর্দা মেনে গেট টুগেদারের মাধ্যমে, বাসায় বাসায় যাওয়ার মাধ্যমে অথবা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মাধ্যমে।
(চলবে)

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

Ads

Ads